গাড়ির নাম্বার প্লেটের রহস্য জানুন

গাড়ির নাম্বার প্লেটের রহস্য জানুন

পড়তে সময় লাগবে: 3 মিনিট...

রাকিব সাহেব চোখ কান খোলা রাখা একজন মানুষ। ছোট বাচ্চাদের মতই তাঁর জানার আগ্রহ। প্রতিনিয়ত হাজারো প্রশ্ন তাঁর মাথায় ঘুরে- কিছু কাজের, কিছু নিতান্তই ছেলেমানুষী। ফলাফলঃ ছোট বেলা বাবার ঝাড়ি, বড় হয়ে বউয়ের ঝাড়ি। এই মুহূর্তে তিনি বাংলামোটর জ্যামে আটকা আছেন। সামনে সাদা রঙের একটা এলিয়েন গাড়ি যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো মেট্রো-ক —– । রাকিব সাহেব তাঁর চিন্তার খোরাক পেয়ে গেলেন। আচ্ছা নাম্বার প্লেটে এই বর্ণ মালা দিয়ে কি বুঝায়? মোবাইল নাম্বারের মত কিছু নাম্বার ও সেখানে দেয়া থাকে কেন ? এগুলি দিয়ে আসলে বুঝায়ই বা কি ? প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের গাড়ির নাম্বারের ফরম্যাট কি একই ধরণের? সেনাবাহিনীর গাড়ীর ফরম্যাটটা অন্য রকম কেন?

জ্যামে বসে নেই কাজ, তো খই ভাঁজ। উনি ডুবে গেলেন তাঁর প্রশ্নের সমাধান করতে ইন্টারনেটের জগতে।

অনেকেই গাড়ির নাম্বারপ্লেটে বাংলা বর্ণমালার অর্থ হয়ত জেনে থাকবেন। আর না জানলেও ক্ষতি নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক এই বর্ণমালার মাধ্যমে গাড়ির নাম্বার প্লেট কী প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

বর্ণমালাগুলোর অর্থ কী তা জানার আগে জানতে হবে বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বার প্লেট কারা এবং কীভাবে ঠিক করে দেয়। আপনি যখন একটি গাড়ি কেনেন, তখন গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হয়। আর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে হয় বাংলাদেশ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি বা বিআরটিএ থেকে। বিআরটিএতে কোন গাড়ির রেজিস্ট্রনের জন্য আবেদন করা হলে, তাদের ফর্মে গাড়ির তথ্যগুলো দিতে হয়। গাড়ির তথ্য দেয়ার পর বিআরটিএ গাড়িটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে সেটি নির্ধারণ কর গাড়িটির একটি নাম্বার প্রদান করে থাকে।

নাম্বার প্লেট লিখার ফরমেট:

ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির নাম্বার নির্ধারণ করার জন্য বিআরটিএ’র একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট রয়েছে। ফরম্যাটটি হল-

শহরের নাম- গাড়ির ক্যাটাগরি- গাড়ির নাম্বার

এই ফরমেটের মাঝের অংশে গাড়ির ক্যাটাগরি বুঝাতেই বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কোন বর্ণ দিয়ে কোন ক্যাটাগরি বুঝানো হয়ে থাকে?

বিআরটিএ যখন কোন গাড়িকে অনুমোদন দিয়ে থাকে, তখন গাড়ির ধরণ অনুসারে গাড়িকে একটি ক্যাটাগরিতে স্থান দেয়া হয়ে। কোন গাড়ি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছে, সেই ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির জন্য একটি বর্ণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নাম্বারপ্লেট প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র নিয়ম অনুসারে মোট ১৯ টি ক্যাটাগরি আছে। এর মধ্যে একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়ি, বাকি ১৮টি ক্যাটাগরি হচ্ছে জনসাধারণের গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ক –

প্রাইভেটকার, ৮০০ সিসি’র প্রাইভেট কারের নাম্বারপ্লেটে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ব্যাঞ্জন বর্ণের প্রথম বর্ণ ক।

খ –

প্রাইভেটকার, যেসব প্রাইভেট কার ১০০০-১৩০০ সিসি’র হয়ে থাকে সেগুলোর নাম্বারপ্লেটে খ লিখা থাকে।

গ –

প্রাইভেটকার, ১৫০০-১৮০০ সিসি’র যেসব প্রাইভেটকার রয়েছে সেগুলোর নাম্বারপ্লেটে খেয়াল করলে দেখা যাবে গ বর্ণ দেয়া আছে।

ঘ –

জীপগাড়ি, জীপগাড়ির ক্যাটাগরি নির্ধারণের জন্য ঘ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

চ –

মাইক্রোবাসের নাম্বার প্লেটে ব্যবহার করা হয় বাংলা বর্ণমালার ৫ম বর্ণ ‘চ’।

ছ –

আবার ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস যেগুলো সেগুলোর নাম্বার প্লেটে থাকে ‘ছ’। লেগুনার জন্যও এই বর্ণটি নির্ধারিত।

জ –

মিনিবাসের ক্যাটাগরি বুঝানোর জন্য নাম্বার প্লেটে জ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ঝ –

আবার বড় বাস বা কোস্টার বাসের ক্যাটাগরি ভিন্ন। এই ক্যাটাগরি বুঝাতে ব্যবহার করা হয় ‘ঝ’।

ট –

কোন গাড়ির নাম্বার প্লেটে যদি ‘ট’ বর্ণটি লিখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি বড় ট্রাকের নাম্বার প্লেট।

ঠ –

নাম্বার প্লেটে ‘ঠ’ থাকলে বুঝতে হবে, নাম্বার প্লেটটি কোন ডাবল কেবিন পিক-আপ এর নাম্বার প্লেট।।

ড –

মাঝারি ট্রাকের নাম্বার প্লেটের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ড’ বর্ণটি।

ন –

কোন গাড়ি যদি ছোট পিক আপ ক্যাটাগরির হয়ে থাকে তাহলে নাম্বার প্লেটে ন ব্যবহার করে ক্যাটাগরি নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে।

প –

টাক্সি ক্যাবের জন্য নির্ধারিত ক্যাটাগরি হচ্ছে প ক্যাটাগরি। এই ক্যাটাগরির বা ট্যাক্সি ক্যাবের নাম্বার প্লেটে ‘প’ বর্ণটি থাকে।

ভ –

২০০০+ সিসি প্রাইভেটকার বুঝানোর জন্য এইসব গাড়ির নাম্বার প্লেটে শহরের নামের পর ‘ভ’ বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ম –

পন্য পরিবহন এবং ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত পিক-আপ বুঝানোর জন্য বাংলা বর্ণমালার ‘ম’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

দ –

প্রাইভেট বা নিজস্ব পরিবহনের জন্য যেসব প্রাইভেট সিএনজি চলাচল করে থাকে সেগুলোর নাম্বার প্লেটে ‘দ’ ব্যবহার করে বুঝান হয় এইটি প্রাইভেট সিএনজি।

থ –

ভাড়ায় চলিত সিএনজির ক্ষেত্রে দ এর বদলে থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

হ –

যদি কোন মোটরবাইক ৮০-১২৫ সিসি’র হয়ে থাকে তাহলে সেই বাইকের নাম্বারপ্লেটে হ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

ল –

যদি কোন মোটরবাইক ১৩৫-২০০ সিসি’র হয়ে থাকে তাহলে সেই বাইকের নাম্বারপ্লেটে ল দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

ই –

ভটভটি টাইপের ট্রাকের নাম্বারপ্লেটে অনুমোদন দেয়ার সময় তাতে ই বর্ণটি দিয়ে ক্যাটাগরি ঠিক করে দেয়া হয়।

য-

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়িগুলো চিহ্নিত করতে নাম্বার প্লেটে য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কোন বর্ণ দিয়ে কোন ধরণের গাড়ি বুঝানো হয় তা জানা থাকলে শুধু নাম্বার প্লেট দেখেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, শহর, ইঞ্জিন প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অনেক সময় গাড়ি ট্রেস করার জন্যও গাড়ির নাম্বার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গাড়ি ট্রেস করার সবচাইতে সহজ এবং নিখুত উপায় হচ্ছে পাই ল্যাবসের তৈরি স্মার্ট কার পার্কিং সিস্টেম এবং
ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস ব্যবহার করা।গাড়ি থাকে সুরক্ষিত, যাত্রী থাকে নিরাপদে।

 1,167 total views,  1 views today

Share your vote!


Related Posts

To Buy Prohori

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

© 2024