পাঁচ দিনের অফিসিয়াল সফর শেষে গতকাল রাতেই দেশে ফিরলাম। । তার মধ্যে সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। ক্লান্তির ভরে এমন দিনে অফিস যেতে কার মন চায়! ড্রাইভারও কদিনের ছুটি পেয়ে দেশের বাড়িতে। গতকাল ফেরার কথা থাকলেও কি কারনে যেন সে আজ বিকেলে ফিরবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু কি আর করা আজ বোর্ড মিটিং। অনেক পরিশ্রমে উচ্চপদে আসীন হয়ে দায়িত্ব এড়ানোর তো কোন প্রশ্ন নেই। তাই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রেডি হলাম।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া। মাত্র ১ ঘন্টা বাকি! উত্তরা থেকে মতিঝিল – ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবো তো? নাস্তা না করেই দ্রুত বের হয়ে পার্কিং এ গিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলাম।
রাস্তায় এসে কেমন যেন অচেনা লাগছে ঢাকাকে। বাহিরের কোন দেশ ঘুরে আসলে এই সমস্যাটা আমার প্রায়ই হয়। রাস্তায় জ্যাম, অযাচিত পার্কিং, কারণে অকারণে হর্ণ, ফুটপাতে হকার, হুট করে রাস্তা পার হওয়া সবকিছুকে নতুন মনে হয়। উন্নত দেশগুলোতে এগুলোর সুন্দর Management আর Automation দেখে এসে এসব নতুন লাগারই কথা। কিন্তু এসব Problem এর সমাধান কি? কে করবে Solution? ওদের দেশে তো সমাধান ওরাই করেছে । আমরা কি করছি? গ্লাস ওয়াইপার এর তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম – ইস! এমনি করে যদি সব সমস্যা মুছে ফেলতে পারতাম!
মিটিং শুরুর ঠিক ১২ মিনিট বাকি। অফিস গেটে ঢুকে Parking এ গাড়ি রাখতে যাবো। অমনি বাধ সাধলো গার্ড।
– আপনি কে?
– আমি?
একদম আকাশ থেকে পড়লাম! এই অফিসে আজ ৭ বছর। আর ব্যাটা বলে কিনা আমি কে? ঘোর কাটলো এই ভেবে আরে আমাকে চিনার কথাও না – গাড়িতো রাখে ড্রাইভার।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া। মাত্র ১ ঘন্টা বাকি! উত্তরা থেকে মতিঝিল – ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবো তো? নাস্তা না করেই দ্রুত বের হয়ে পার্কিং এ গিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলাম।
রাস্তায় এসে কেমন যেন অচেনা লাগছে ঢাকাকে। বাহিরের কোন দেশ ঘুরে আসলে এই সমস্যাটা আমার প্রায়ই হয়। রাস্তায় জ্যাম, অযাচিত পার্কিং, কারণে অকারণে হর্ণ, ফুটপাতে হকার, হুট করে রাস্তা পার হওয়া সবকিছুকে নতুন মনে হয়। উন্নত দেশগুলোতে এগুলোর সুন্দর Management আর Automation দেখে এসে এসব নতুন লাগারই কথা। কিন্তু এসব Problem এর সমাধান কি? কে করবে Solution? ওদের দেশে তো সমাধান ওরাই করেছে । আমরা কি করছি? গ্লাস ওয়াইপার এর তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম – ইস! এমনি করে যদি সব সমস্যা মুছে ফেলতে পারতাম!
– আমি আবিদ হাসান। এই অফিসের চিফ প্রসেস অফিসার।
– সরি স্যার। আমি কালকে এখানে জয়েন করছি তাই চিনতে পারি নাই। একটু অপেক্ষা করেন। আমি ভীতরে গিয়া দেইখা আসি কোন Slot ফাঁকা আছে।
– তুমি গেলে এইখানে কে দেখবে? বাকি লোকজন কোথায় ?
– স্যার, আমাগো কাঠের Barrier ভাইঙ্গা গেছে কিছু আগে । দুইজন হেইডা ঠিক করাইতে গেছে। আরেকজন ভিতরে আছে গাড়ি বের হইলে অইখান থেকে হুইসেল দিবে তাই।
– আচ্ছা যাও। দ্রুত এসো।
এরই মধ্যে আরেকটা গাড়ি পিছন থেকে হর্ন বাজানো শুরু করলো। গ্লাস নামিয়ে মাথা বের করতেই দেখি MD স্যারের ড্রাইভার।
– স্যার, যাচ্ছেন না কেন?
– গার্ড ভিতরে গেছে স্লট ফাঁকা আছে কিনা দেখতে।
– ও আচ্ছা।
সময় চলে যাচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে ঘড়ি ও মনে হয় বিরক্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যেই গার্ড দৌড়ে হাজির। সামনে এসে MD স্যারের গাড়িটা দেখেই বেচারার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আবার বিপদের আভাস।
– স্যার, স্লটতো ফাঁকা একটা। দুইটা গাড়ি ক্যামনে রাখুম।
– কেন? একটা ফাঁকা কেন?
– স্যার, আজকে কি মিটিং নাকি। বাহির থেকে গেস্টরা গাড়ি রাখছেন।
সময় বাকি ৬ মিনিট। MD স্যারের ড্রাইভারকে বুঝিয়ে সুজিয়ে পরে গাড়ি রাখার কথা বলে যেইনা গাড়িটা পার্কিং এ ঢুকালাম অমনি ভিতর থেকে তীব্র হুইসেল। সামনে আরেক গাড়ি বের হচ্ছে। আমি ধরে নিলাম আজ কপালে দুঃখ নিশ্চিত। এর মধ্যেই গার্ড এসে গাড়িটা ব্যাক করে জায়গা করে দিল।
কোনমতে মিটিং রুমে ঢুকলাম। কি আজব! মিটিং রুম সরগরম এই Parking নিয়ে। কিছু আগেই নাকি আমাদের চীফ এডমিন অফিসার ব্যারিয়ারের ধাক্কায় হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন । আর তাই চেয়ারম্যান স্যার পার্কিং উন্নয়ন নিয়ে সবার মতামত নিচ্ছেন। কেউ দিলেন Automated Barrier লাগানোর আইডিয়া। কেউ কেউ পার্কিং এ Security এর কথা বললেন যাতে বাইরে থেকে অপরিচিত কেউ এসে গাড়ি চুরি করতে না পারে। কেউ আইডিয়া দিলেন Billing System করলে অতিরিক্ত সময় গাড়ি রাখার প্রবণতা কমবে। কেউ বললেন আলাদা স্লট ভিত্তিক পার্কিং করার কথা। কেউ চাইলেন বাইরে থেকে স্লট ফাঁকা আছে কিনা তা জানার ব্যবস্থা রাখা। আমিও আজকের ঘটনা বললাম সাথে বাইরের দেশে কিভাবে অটোমেশনের মাধ্যমে Parking Management হয় তাও জুড়ে দিলাম। চেয়ারম্যান স্যার বললেন শুধু সমস্যা নিরসন নয় একটা Multinational Company হিসেবে আমাদের সব ক্ষেত্রে স্মার্টনেস রাখতে হবে ।Parking Automation এর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ইন্সটলেশন এর দায়িত্ব পড়ল আমাদের টিমের উপরেই। আমি কয়েকটা বিদেশী কোম্পানির কথা ভাবতে ভাবতেই আমার এক কলিগ বললেন দেশেই এই রকম অটোমেশন করার কোম্পানি আছে। আমি একটু অবাক হলাম। দেশেই সম্ভব? যাক ভালোই হলো – পুরো দেশকে বদলাতে না পারি অন্তত নিজের দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের অফিস তো বদলাতে পারবো। কিছু করার সুযোগতো এখনই । সময় কোথায় সময় নষ্ট করবার?
উপরের অংশটুকু গল্প হলেও সমস্যাগুলো গল্প নয়। পার্কিং এর এসব সমস্যা ছাড়াও দেশের নানান সমস্যা দেশীয় প্রযুক্তির মাধম্যে সমাধান করার প্রত্যয় নিয়ে পাই ল্যাবস বাংলাদেশের একদল তরুণ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ই ভি এম,Smart Car Parking System, Vehicle Tracking উদ্ভাবনসহ দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের নানা ধরণের টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধান ও অটোমেশনে পাই ল্যাবস সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। পরিবর্তনের প্রত্যয়ে দেশীয় প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতায় আপনাদের সাহচার্য আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
56 total views, 1 views today