প্রায় ৪৩০০০ বছর আগে এক ভালুক পাহাড় থেকে গড়িয়ে পরে মারা গিয়েছিল। কাছাকাছি সময়ে একটি ম্যাম্মোথ ও শকুনও মারা গিয়েছিল। যদিও এগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা তবে এর মেলবন্ধনটা এক সুন্দর সৃষ্টিতে। মৃত এই প্রাণীদের কঙ্কাল থেকেই মানুষ তৈরি করেছিল বাঁশি!
ভাবুনতো আপনি একজন প্রাচীন গুহামানব। যে ইতিমধ্যে আগুন জ্বালাতে দক্ষ, শিকারের জন্য ছোটখাট অস্ত্র বানাতে জানে আবার শীত থেকে বাচতে পশুর চামড়া দিয়ে কাপড়ও তৈরি করতে পারে সে এরপর আর কি আবিষ্কার করবে? সেটাকি শুধুই অপ্রয়োজনীয় একটি বাঁশি যা বাতাসে কিছু এলোমেলো কম্পন সৃষ্টি করে। তাহলে পূর্বপুরুষরা আসলে কি আবিষ্কার করে গেছে?
সাধারনত মানুষ নিজে বেঁচে থাকার জন্য, সন্তানের খাদ্য সংগ্রহ কিংবা পাশের গ্রামের সাথে লড়াইয়ে জেতার কারণে উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু শুধুমাত্র মজার জন্যও কিছু উদ্ভাবন হয়েছে যা শেষ হয়েছে কিছু অসাধারণ আবিষ্কারে। আর বদলে দিয়েছে পৃথিবীকে।
বাতাসের ধাক্কায় সুর সৃষ্টি করা বাঁশির ধারণা থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে এসেছিল আঙ্গুলের চাপে সুর তৈরি করা মিউজিকাল কী-বোর্ড অর্থাৎ পিয়ানো। এরপর মানুষ ভাবল কী-বোর্ডে সুর নয় থাকবে বর্ণ। একরকম লিখতে পারা পিয়ানো থেকে উদ্ভাবিত হল টাইপরাইটার।
প্রায় একশো বছর আগে রেনেসা যুগে, বাগদাদের তিন ভাই এক ধরণের স্বয়ংক্রিয় বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কার করেন। মূলত এটি ছিল এক বিশাল সঙ্গিত বাক্স যা নিজেই চলতে পারে। নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ঘুর্ণায়মান সিলিন্ডারে পিন স্থাপন করে দিলেই শুরু হয়ে যেত সুমধুর গান। ভিন্ন গান শুনতে শুধু সিলিন্ডার বদলে দিলেই হল। সূত্রপাত ঘটল যুগান্তকারী ধারণা প্রোগ্রামিং এর।
এ ধারণা থেকেই মানুষ কল্পনা করল হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা শক্তিশালী এ ধারণাটি কোন যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে আসেনি, এসেছে সাধারণ একটি স্বয়ংক্রিয় বাদ্যযন্ত্র দেখে! পারস্যে একসময় স্বয়ংক্রিয় এ বাদ্যযন্ত্র একেবারে সহজলভ্য হয়ে গেল। এমন সময় একজন সেই একই কোডেড সিলিন্ডারের সাহায্যে নড়াচড়া করতে পারা রোবট মিউজিসিয়ান উদ্ভাবন করেন এবং নাম রাখলেন অটোমাটা। সে একজন উদ্ভাবক কিন্তু ছিলেন ফ্রেঞ্চ মিউজিসিয়ান জাক ডি ভাক্যান্সন।
ভাক্যান্সন এর হঠাৎ একদিন মাথায় এল যদি যন্ত্রে প্রোগ্রাম করে সুন্দর সুর তৈরি করা যায় তবে কেন সেই একই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কাপড়ে রঙ্গিন প্যাটার্ন তৈরি করা যাবে না? তিনি সিলিন্ডারে পিন স্থাপন করে সুর তৈরির বদলে রঙ্গিন সুতার প্যাটার্ন তৈরি করলেন। এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামেবল তাঁত।
কিন্তু ধাতুর সিলিন্ডার তৈরি বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই আরেক ফ্রেঞ্চ উদ্ভাবক জ্যাকার্ড নিয়ে আসলেন এক অসাধারণ ধারণা। তিনি সিলিন্ডারের বদলে পেপার পাঞ্চড কার্ড ব্যবহার করেন। সাশ্রয়ী ও নমনীয় পেপার কার্ড প্রোগ্রামিং এর জন্য বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠল। আশ্চর্যের ব্যপার হল ১৯৭০ সালের চার্লস ব্যবেজ এই পেপার কার্ড ধারণা থেকেই আবিষ্কার করেছিলেন প্রথম প্রোগ্রামেবল কম্পিউটার। বাকি ইতিহাসতো আমাদের সবার জানা।
সবসময় প্রয়োজনই উদ্ভাবনের মূলে থাকবে তা কিন্তু নয়। সাধারণ কিছু মজার খেলাও অসাধারণ কোন রূপ নিতে পারে। শিশুকে তার চারপাশের জগত জানতে দিন। নিজের মত করে অর্জন করে নেবে নানান অভিজ্ঞতা। আর সে অভিজ্ঞতার সহজ আনন্দ আর পরিতৃপ্তি থেকেই পাবে আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা…
551 total views, 2 views today