মানুষ কি পারে, কতটুকু পারে? মানুষের সামর্থ কতটুকু কি করার? এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। মানুষ সামান্য ভয় পেয়েও মারা যায়, আবার হাতির পাড়া খেয়েও বেঁচে থাকে, কেউ পুকুরে পড়ে মারা যায়, কেউ সাগর পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এক সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতো মানুষ ৪ মিনিটে এক মাইল দৌড়াতে পারবে না। মেডিক্যাল সাইন্স এই ব্যাপারে গবেষণা করে দেখলো, মানুষের পক্ষে ৪ মিনিটে ১ মাইল দৌড়ানো ত সম্ভব না-ই বরং এমন চেষ্টা যদি কেউ ভুলেও করে তবে সে মারা যেতে পারে! অর্থাৎ মানুষ তুমি পাহাড়ে ওঠ, জঙ্গলে রাত কাটাও, হেটে হেটে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াও, গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডকে ছেকা দাও, প্রয়োজনে নাসার খবরের নেশায় পইরা থাক; কিন্তু, ৪ মিনিটে মধ্যে ১ মাইল যাওয়ার চেষ্টা কখনোই কইরো না চান্দু!!
যাই হোক, ১৯২৯ সালে রজার বেনিস্টার নামে এক আপদ(!) পৃথিবীতে উদয় হইলো, সে বললো যে আমি ৪ মিনিটে ১ মাইল দৌড়াতে পারবো! পারবো বলছে ত বলছেই… এই পারবো’র ক্ষমতা তিনি দেখাইলেন এবং একই সাথে মেডিক্যাল সায়েন্স এবং বাঘা বাঘা ব্যক্তিদের নতুন ভাবে চিন্তা করতে শেখালেন ১৯৫৩ সালের মে মাসের ৬ তারিখে। ৪ মিনিটে(৩:৫৯:৪) তিনি ১ মাইল দৌড়ে মানুষের হাজার বছরের বিশ্বাসকে ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা বানিয়ে দিলেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে বেঁচে থেকে সে ঠোঙায় ঝালমুড়িও খেলেন! মজা এখানই শেষ না, ঠিক ১৫ দিনের মাথায় বেনিস্টারের রেকর্ড ভাঙলেন জন ল্যান্ডি, এই (অ)ভদ্রলোক ৩ মিনিট ৫৮ (৩:৫৭:৯) সেকন্ডে দৌড়ালেন ১ মাইল! পরের কথা আর না বলি, যুগে যুগে কয়েক হাজার দৌড়বিদ আছে যারা ৪ মিনিটে ১ মাইল দৌড়াইছে। বর্তমানে ৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে (এর কম থাকতে পারে জানা নাই) ১ মাইল দৌড়ানোর রেকর্ডও আছে। যখন সবাই বলছে না পারা যায় না, তখন কেউ পারে নাই। বেনিস্টার বলছে পারবো, সে পারছে এবং সাথে কয়েক হাজার মানুষকে পারার সুযোগ করে দিছে। অর্থাৎ মানুষের সীমাবদ্ধতা তখনি আসে যখন তার চিন্তায় সংকীর্ণতা আসে। আমি বিশ্বাস করতে পারলে অবশ্যই পারবো, বিশ্বাস করতে না পারলে শুধু নিজে পারবো না তা না; নিজের অজান্তেই আমার পেছনের কয়েক হাজার মানুষকেও না পারার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাচ্ছি…
ফুটবল, ক্রিকেট দু’টি জনপ্রিয় খেলা। আচ্ছা কি মনেহয়, পৃথিবীর সমস্ত ফুটবলার কি শুধু ল্যাটিন আমেরিকা, স্পেন কিংবা ইংল্যান্ডেই জন্মায়? পৃথিবীর প্রতিটা খেলোয়াড়ই দুইটা হাত, দুইটা পা, দুইটা চোখ নিয়ে খেলে তবে কেন শুধু নির্দিষ্ট কিছু দেশের মধ্যেই ভালো ভালো ফুটবলার জন্মায়? মাগুরার ছেলে সাকিব আজকে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের বাড়ির পাশে যে ছেলেটার বাড়ি সেই ছেলেটা আবার চিটাগাং এর কিছু ছেলের সাথে মেসে থাকে। সে হয়তো কথায় কথায়ই বলে আমি আর সাকিব এক সাথেই খেলছি, এক মাঠে। কথা প্রসঙ্গে বলতেও পারে সে এলাকায় সাকিবের চেয়ে ভালো খেলতো, তারও নামডাক ছিল। খেলাটা ধরে রাখলে সেও হয়তো কিছু করতে পারত! এই যে নিজের সাথে বিশিষ্ট কারও পার্থক্য করতে চাওয়া বা মিল খুঁজতে চাওয়া, চাইলেই পারতাম মনোভাব- এইটাই এই বাংলাদেশে আরও অনেক সাকিব জন্মাতে সাহায্য করবে। ঠিক একইভাবে প্লে কিংবা মেরাডোনাকে এত কাছ থেকে যারা দেখছে তারাইতো নিজেদের তার মতো ভাবতে শিখছে এবং সর্বপরি নিজেকে বিশ্বাস করছে। আর যে যেমন চিন্তা করতে পারে একদিন সে সেই বিষয়ে ভালো কিছু করতে পারবেই। বলা হয়, কেউ যদি কোনো একটা বিষয়ে পেছনে ১০,০০০ ঘন্টা সময় যথাযথাভাবে দেয় তবে সে সেই বিষয়ে জাতীয় না আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ মাত্র ৭ বছর প্রতিদিন যথাযথভাবে ৪ ঘন্টা করে সময় নির্দিষ্ট কোন একটি বিষয়ের পেছনে দিলে সে সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছবে; সত্যি পৌঁছবে! সুতরাং, সামান্য বৈষয়িক অসম্পূর্ণতা কখনোই একটা মানুষের স্বপ্নের পথে বাঁধা হতে পারে না যদি সে স্বপ্ন দেখতে জানে। শুধুমাত্র একটা বিষয়ই বাঁধা হতে পারে, আর সেটা হচ্ছে মানসিক সীমাবদ্ধতা। আমাকে বিশ্বাস করতে হবে আমি পারবো অন্যথায় না।
শেষ করছি, সত্যি বলতে খুব কম মানুষই নিজেকে বিশ্বাস করার মতো সাহস নিয়ে জন্মায় এবং আমি যখন এই কথাগুলো লিখছি তখন কি আমি আমাকে বিশ্বাস করছি?! যাই হোক বিশ্বাস করতে পারলে জীবন সুন্দর না করতে পারলে জীবন নিকৃষ্ট।
কুংফু পান্ডা মুভিতে পো’র বাবা যখন বলে “সিক্রেট ইজ নাথিং” তখনি পো বুঝতে পারে আসলেই সিক্রেট কিছু নাই, বিশ্বাসই সব। কত সাধারণ একটা ঘটনা একটা দেশকে রক্ষা করে। সাধারণের মাঝে অসাধারণকে খোঁজার চেষ্টা অব্যহত থাকুক সকলের…
58 total views, 2 views today